সোমবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৫, ০১:২১ পূর্বাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার : সাভারে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নিহত হওয়ার জেরে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা দেড় শতাধিক দোকানে হামলা ও ভাঙচুর করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ সময় স্থানীয় লোকজন ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে।
আজ শুক্রবার সন্ধ্যায় সাভারের বিরুলিয়া ইউনিয়নের খাগান এলাকার আকরান বাজারে ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী ও স্থানীয়দের সঙ্গে এ ঘটনা ঘটে। দফায় দফায় সংঘর্ষে কয়েকজন আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।
নিহত শিক্ষার্থীর নাম হাসিবুল ইসলাম অন্তর। তিনি ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির টেক্সটাইল বিভাগের ৪৪ তম ব্যাচের ছাত্র। তাঁর গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহ বলে জানা গেছে।
সাভার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দীপক চন্দ্র সাহা শিক্ষার্থীর মৃত্যু ও সংর্ঘষের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
সাভার থানার পুলিশ ও ইউনিভার্সিটি সূত্রে জানা গেছে, তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে গত ২৭ অক্টোবর স্থানীয় কয়েকজন মিলে অন্তরকে বিরুলায়া সেতুর নিচে নিয়ে যায়। এরপর তাকে মারধর করে। মারধরের কারণে অন্তর অচেতন হয়ে পরলে তাঁরা তাঁকে খাগান বাজারে ফেলে রেখে পালিয়ে যায়।
এলাকাবাসী ও শিক্ষার্থীরা জানান, কয়েকদিন আগে ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী অন্তরকে আক্রাইন বাজারের কিছু লোক তুলে নিয়ে ব্যাপক মারধর করেন। পরে তারা অচেতন অবস্থায় ফেলে দিয়ে চলে যান। খবর পেয়ে সহপাঠীরা তাকে উদ্ধার করে আশুলিয়ার রাজু হাসপাতালে ভর্তি করেন। পরে তার অবস্থার অবনতি হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য সাভারের এনাম মেডিকেলে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বৃহস্পতিবার (২ নভেম্বর) মারা যান তিনি।
এরপর থেকেই শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছিল। তারা জড়িতদের গ্রেফতার দাবিতে শুক্রবার সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় নেমে বিক্ষোভ করেন। এসময় বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর চালান তারা।
হামলার শিকার হোটেল ব্যবসায়ী মোহাম্মদ আলী বলেন, শিক্ষার্থীরা আক্রাইন বাজারের একটি পেট্রলের দোকান থেকে পেট্রল কিনে দোকানের সামনে রাখা বসার বেঞ্চে আগুন ধরিয়ে দেন। এছাড়া শতাধিক দোকানে ভাঙচুর চালান। তবে তারা কাউকে আক্রমণ করেননি।
পরে স্থানীয়রা উদ্ধার করে অন্তরকে প্রথমে ড্যাফোডিল কেয়ার নিয়ে যায়। অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে স্থানীয় রাজু মেডিকেল নিয়ে যাওয়া হয়। পরে সেখান থেকে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করা হয়। ওই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় অন্তর গতকাল বৃহস্পতিবার মারা যান।
পুলিশ জানায়, মৃত্যুর ঘটনা জানাজানি হলে বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করতে থাকে। ঘটনার প্রতিবাদে শিক্ষার্থীরা আজ শুক্রবার সন্ধ্যায় মিছিল বের করে। পরে তাঁরা হত্যার জন্য স্থানীয়দের দায়ী করে স্লোগান দিতে থাকেন। একপর্যায়ে তাঁরা বিরুলিয়া সাভার সড়কের আকরান বাজারে থাকা কয়েকটি দোকানের আসবাপত্র ভাঙচুর করে।
এ সময় স্থানীয়রা তাঁদের বাধা দিলে দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। এ সময় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা দেড় শতাধিক দোকানে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করেন।
হামলার শিকার হোটেল ব্যবসায়ী মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা একটি পেট্রলের দোকান থেকে পেট্রোল কিনে দোকানের সামনে রাখা বসার বেঞ্চে আগুন ধরিয়ে দেয় এবং দোকানে ভাঙচুর করে।’
এ বিষয়ে সাভার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দীপক চন্দ্র সাহা বলেন, ‘শিক্ষার্থী মৃত্যুর ঘটনার জেরে স্থানীয় দেড়শতাধিক দোকানে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। শিক্ষার্থী অন্তর হত্যার ঘটনায় জড়িত প্রধান আসামি রাহাতকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁকে আজ শুক্রবার ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে সোপর্দ করা হয়। আদালতে ১৬৪ ধারায় দেওয়া জবানবন্দিতে ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে রাহাত। পূর্ব শত্রুতার জের ধরে অন্তরকে হত্যা করা হয়।’